ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত ঈদুল আজহা আজ।
ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত ঈদুল আজহা আজ। এ ঈদকে বলা হয় কোরবানির ঈদ। মহান আল্লাহর নির্দেশে পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে এ উৎসব পালিত হয়। ঈদুল আজহা উদযাপনের জন্য এখন প্রস্তুত সারাদেশ। শুক্রবার সকালে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করতে গিয়ে ঈদগাহে হবে উম্মাহর মহামিলন। তার পর ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসব-আমেজের মধ্য দিয়ে সারাদেশে পশু কোরবানি করবেন মুসলিমরা। বাংলাদেশ যখন পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপনের জন্য প্রস্তুত তখনই সৌদি আরবের মক্কায় পদদলিত হয়ে শত শত হাজি হতাহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কোনো বাংলাদেশি আছেন কিনা সেই দুশ্চিন্তা আজ ছায়া ফেলবে ত্যাগের বার্তা নিয়ে আসা এই ঈদ। হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের আত্মত্যাগ ও অনুপম আদর্শের প্রতীকী নিদর্শন হিসেবে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বছর আগে থেকে কোরবানির প্রচলন হয়। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশে হযরত ইবরাহিম (আ.) তার প্রাণপ্রিয় পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.)কে কোরবানি করতে উদ্যত হয়েছিলেন। মহান প্রভু তার এই কাজে সন্তুষ্ট হন। নিজ পুত্রকে কোরবানি দেয়ার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর মহান আল্লাহর নির্দেশে ইবরাহিম (আ.) জীবিত থাকাকালে প্রতি বছরই পশু কোরবানির মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার আনুগত্যের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)ও এ আদর্শ অনুসরণ ও বহাল রাখতে আদিষ্ট হন। তিনিও তার জীবদ্দশায় প্রতিবছরই কোরবানি করেছেন এবং তার উম্মতদের জন্য এ আদর্শ ও প্রথা অনুসরণের নির্দেশ দিয়ে গেছেন। সেই আদর্শকে সমুন্নত রেখে বাংলাদেশেও ইতোমধ্যেই ঈদ উদযাপনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানির প্রস্তুতি নিয়েছেন। রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে দেশের প্রধান ঈদ জামাত সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে। আবহাওয়া প্রতিকূল হলে ওই জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পর্যায়ক্রমে ৫টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত সকাল ৭টা, দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টা, তৃতীয় জামাত সকাল ৯টা, চতুর্থ জামাত সকাল ১০টা এবং পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ঈদুল আজহার নামাজ আদায়ের জন্য মুসল্লীদের সুবিধার্থে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পর্যাপ্ত পানি ও নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাজধানীতে জাতীয় ঈদগাহসহ ৩৬২টি ঈদ জামাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ঈদুল আজহার ২২৮টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় ঈদগাহে ৫ হাজার মহিলা মুসল্লিসহ লক্ষাধিক মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মুসল্লিদের নামাজ আদায়ের সুবিধার্থে বসার জায়গা, ওজু ও মোবাইল টয়লেটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত জাতীয় ঈদগাহ। এদিকে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের উদ্যোগে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত সকাল ৯টায় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য মুসুল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিশেষ ট্রেন ও বাস চলাচল করবে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত তিন দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় বৃহত্তম এ উৎসব উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এ উপলক্ষে দেয়া বাণীতে দেশবাসীসহ বিশ্বের সকল মুসলমান ভাইবোনদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন। ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দেশের বৃহত্তম বিরোধী দল ও জোটের নেতা বেগম খালেদা জিয়াও। ঈদুল আজহা উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের সকল কারাগার, সরকারি হাসপাতাল, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম, শিশুসদন, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র, সেফ হোম, দুঃস্থ কল্যাণ কেন্দ্র এবং শিশু ও মাতৃসদনে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। নগরীর লাখ লাখ বাসিন্দা গ্রামের বাড়িতে আপনজন ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ঈদের খুশি ভাগাভাগি করার জন্য রাজধানী ছেড়েছেন। পথের বিড়ম্বনা ও ভোগান্তি সত্ত্বেও অসংখ্য মানুষ নাড়ির টানে গ্রামের বাড়ি ছুটেছেন। এদিকে পবিত্র উৎসব উপলক্ষে দৈনিক পত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টিভি চ্যানেল এবং রেডিও বিনোদনমূলক বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যথাযোগ্য মর্যাদা ও আনন্দ উৎসবের মধ্যদিয়ে ঈদ উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ের সঙ্গে সমন্বয় রেখে স্থানীয় পর্যায়ে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলো দেশব্যাপী ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এদিকে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন কোরবানির পশুর বর্জ্য দ্রুত অপসারণের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
কোন মন্তব্য নেই: