চামড়ার দাম নিয়ে টানাটানি
কোরবানির পশুর চামড়া ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে আড়তদার ও মৌসুমী ব্যবসায়ীদের মধ্যে দর-দামে ‘বনিবনা’ হচ্ছে না। ঈদের আগে চামড়ার যে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল, বাজার তার ধারে-কাছেও নেই। খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, পাড়া-মহল্লা থেকে চামড়া সংগ্রহ করে রাজধানীর বিভিন্ন হাটে এসে দাম দেখে তাঁরা হতাশ হয়েছেন। ফলে লোকসানে চামড়া বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। অপরদিকে আড়তদাররা বলছেন, মৌসুমী ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা পাড়া-মহল্লা থেকে বেশি দামে চামড়া কিনে এনেছেন। বাজারে দামও হাঁকাচ্ছেন বেশি। তাদের বেধে দেওয়া দামে চামড়া পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে চামড়া কিনতে তাদের ‘বেগ’ পেতে হচ্ছে। ঈদের আগে গত ২৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কোরবানি পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল। এতে ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। ঢাকার বাইরে একই মানের চামড়ার দাম ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় কেনার কথা। যদিও এই দাম ছিল গত বছরের তুলনায় গড়ে প্রায় ২০ টাকা কম। এবার খুচরা বা মৌসুমী ব্যবসায়ীরা প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম হাঁকছেন ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। রাজধানীর পাড়া-মহল্লার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মূলত ফড়িয়া এবং মৌসুমী ব্যবসায়ীরাই কোরবানির পশুর চামড়া ক্রয় করে থাকেন। পরে তারা এসব চামড়া নিয়ে আসেন, রাজধানীর বেশ কিছু স্থানে বসা কাচা চামড়ার অস্থায়ী বাজারে। বিশেষ করে সাইন্সল্যাব এবং ঢাকেশ্বরী মোড়ে তাদের কাছ থেকে চামড়া কেনেন ট্যানারি এবং আড়ত মালিকরা। চলে হরদম দর কষাকষি আর বেচাকেনা। বাজারে চামড়া নিয়ে আসা বেশিরভাগ মৌসুমী ব্যবসায়ীর দাবি, লোকসানে চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে তাদের। কয়েকজন মৌসুমী ব্যবসায়ী এনটিভিকে জানান, তারা ভেবেছিলেন চামড়ার দাম বেশি হবে। ফলে একটু চড়া দামেই তারা চামড়া কিনে পাইকারি বাজারে এনেছিলেন। কিন্তু আড়তদাররা চামড়ার দাম কম দিচ্ছে। তবে ট্যানারি এবং আড়ত মালিকরা বলেন, মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বেশি দামে চামড়া কিনে এনেছেন। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই তাদের কাছ থেকে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে চামড়া কিনতে হচ্ছে তাদের। একজন আড়তদার জানান, ক্ষেত্রবিশেষে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা দরে তিনি চামড়া কিনছেন। একজন ট্যানারি মালিক বলেন, মৌসুমী বিক্রেতারা দাম বেশি চাচ্ছেন, ফলে তাদের চামড়া কিনতে সমস্যা হচ্ছে। অনেক চামড়া ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজার কিছুটা মন্দা থাকায়, বেশি দামে চামড়া কিনে লোকসানে পরার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মো. আফতাব খান বলেন, চামড়া কিনতে আমরা খুব হিমসিম খাচ্ছি। গতবছর আমাদের খুব লোকসান হয়েছে। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি কম দামে চামড়া কেনা। কিন্তু যেহেতু খুচরা ব্যবসায়ীরা বেশি দামে চামড়া ক্রয় করেছে ফলে তারা দামও বেশি চাচ্ছে। আমাদের চামড়া কিনতে সমস্যা হচ্ছে। তবে চামড়ার দামের প্রকৃত চিত্র বোঝা যাবে, রাজধানী এবং এর আশপাশের সব এলাকা থেকে চামড়া আসার পরেই।
কোন মন্তব্য নেই: