ভয়ঙ্কর কিছু পুতুলের দ্বীপের খোঁজ ।
ভয়ঙ্কর কিছু পুতুলের খোঁজ মিলেছে আমেরিকার পঞ্চম বৃহত্তম রাষ্ট্র মেক্সিকোতো। এই দ্বীপে গেলে যতোবড়ই সাহসী হোক তার পিলে চমকে যাবে।
কিন্তু বলিউডের কোনো হরর সিনেমার শ্যুটিংয়ের জন্য এ দ্বীপটি সাজানো হয়নি। এর পেছনের গল্পটিও গা শিরশির করা। অবশ্য স্থানীয়দের মুখে নানা ধরনের কিংবদন্তী শুনা যায়।
মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো সিটি থেকে ১৭ মাইল দক্ষিণে হোকিমিলকো জেলায় অবস্থিত এই পুতুল দ্বীপের। সাধারণ একটি ঘটনা থেকেই এই দ্বীপের রহস্যময় যাত্রা শুরু হয়। তা প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ বছরের আগের ঘটনা। দ্বীপটি ছিল শীতল ও অন্ধকারাচ্ছন্ন। তিন মেক্সিকান শিশু এই দ্বীপে পুতুল নিয়ে খেলা করছিল। খেলতে খেলতে এখানেই তারা পুতুলের বিয়ে দেয়। কিন্তু হঠাৎ একদিন এক শিশু উধাও হয়ে যায়। শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। অনেক খোঁজার পর পাশের একটি খালে সেই শিশুটির মৃতদেহ পাওয়া যায়। সেই থেকে সাধারণ মানুষের কাছে এই দ্বীপটি হয়ে ওঠে ভয়ঙ্কর এক পুরি এবং লোকমুখে কালক্রমে প্রচলিত হয় নানা কাহিনী।
অনেক সাহসী বীরেরও বুক কেঁপে ওঠে এই দ্বীপটিতে গেলে। আশ্চর্য এই দ্বীপে গাছের ডালে ঝুলছে পুতুল, ছোট পরিত্যক্ত ঘরের দেয়ালে ঝুলছে পুতুল। যেদিকে চোখ যায় সেদিকে শুধু পুতুল আর পুতুল। কিন্তু এসব কোনো আদুরে পুতুল নয়। এ যেন গা গুলিয়ে আসা কোনো হরর সিনেমার দৃশ্য যেন।
এই নির্জন দ্বীপে এত পুতুল এলো কোত্থেকে, সেটা কেউই পরিষ্কার করে বলতে পারে না। স্থানীয়দের ভাষায় দ্বীপটির নাম ‘ইলসা দে লাস মিউনিকাস’ বা পুতুলের দ্বীপ।
তবে এই পুতুলগুলো আপনা-আপনি এখানে আসেনি এটা স্পষ্ট। দন হুলিয়ান সানতানা নামের এক যাজক ১৯৫০ সালের দিকে তপস্যা করার জন্য এই দ্বীপকেই বেছে নিয়েছিলেন। তার কাছে নাকি মৃত শিশুটির আত্মা আবদার করেছিল যে, ভয়ঙ্কর সব পুতুল এনে দ্বীপের চারপাশে টাঙিয়ে দিতে হবে।
তবে সেগুলো যেমন তেমন পুতুল নয়। বীভৎস সব পুতুল চেয়ে বসে শিশুটির আত্মা, যেগুলো দেখলে মনে হবে তারা মানুষের নির্মম নির্যাতনে প্রাণ হারিয়েছে। ওই আত্মার অনুরোধেই হুলিয়ান তার আশ্রমে চাষ করা সবজির বিনিময়ে মানুষের কাছ থেকে নষ্ট পুতুল সংগ্রহ করতে থাকেন। নষ্ট পুতুল এনে দ্বীপের চারপাশে টাঙিয়ে দিলে নাকি শিশুটির আত্মা খুশি হতো। এভাবেই এই দ্বীপটি গড়ে ওঠে এক ভয়ঙ্কর পুতুল দ্বীপ হিসেবে।
মানুষের মধ্যে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা দূর করার জন্য মেক্সিকো সরকার ১৯৯০ সালে এই দ্বীপটিকে ‘ন্যাশনাল হেরিটেজ’ ঘোষণা করে দ্বীপটিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে পর্যটন অঞ্চল বানানোর উদ্যোগ নেয়। কিন্তু পর্যটকরা কদাকার পুতুল দেখে রাতে দুঃস্বপ্ন দেখতে হয়, এই ভয়ে এখানে আসতে চায় না। সারা বছরে ২০-৩০ জনের বেশি পর্যটকের আনাগোনা এখানে দেখা যায় না।
সবশেষে ২০০১ সালের ২১ এপ্রিল ঘটে আরও একটি রহস্যময় ঘটনা। সেদিন দন হুলিয়ান তার ভাইয়ের ছেলেটিকে নিয়ে সেই খালটিতে মাছ ধরছিলেন, যেই খালটিতে শিশুটির মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল। মাছ ধরার এক পর্যায়ে দন হুলিয়ান তার ভাইয়ের ছেলেকে বলেন, পানির নিচ থেকে কেউ একজন তাকে ডাকছে। এর কিছুদিন পরই দনের মৃতদেহ সেই খাল থেকে উদ্ধার করা হয় এরপর থেকে পাশের অঞ্চলের মানুষগুলো বাসা-বাড়িতে পুতুল রাখা নিয়ে বেশ আতঙ্কে দিন কাটায়। ছেলেমেয়েদের পুতুল কিনে দিতে চায় না।
কোন মন্তব্য নেই: